বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূতের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে রংপুর চেম্বারে মত বিনিময় সভা
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সন্ধ্যায় রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র আয়োজনে নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এক মত বিনিময় সভা রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন এর সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত  নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ডক্টর চপ লাল ভূষাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশস্থ নেপাল দূতাবাসের কাউন্সিলর ধন বি অলি ও রাষ্ট্রদূতের সেক্রেটারি রিয়া সিয়েটরি।
নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি এবং রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, এফবিসিসিআই এর পরিচালক ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, রংপুর চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানিকারক মোঃ মগরব আলী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, রংপুর অফিসের ব্যুরো চীফ মামুন ইসলাম, মাছারাঙ্গা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার রফিক সরকার, রংপুর চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনজুর আহমেদ আজাদ, রংপুর চেম্বারের পরিচালক ও রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আশরাফুল আলম আল আমিন। 
স্বাগত বক্তব্যে চেম্বারের সিনিয়র সহ- সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন বলেন, নেপাল আমাদের পাশর্^বর্তী বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ প্রকৌশল, প্লাস্টিক ও উৎপাদনশীল পণ্য, ওভেন গার্মেন্টস, হোমটেক্স ও চামড়াজাত পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে নেপালে। তাই তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশি পণ্য নেপালে রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা শুল্ক সমস্যা দূর করতে নেপালের রাষ্ট্রদূতের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া তিনি বলেন, ভৌগলিকভাবে নেপাল ভারত ও চীনের সীমান্তঘেরা। নেপালের নেই কোনো নৌ-বন্দর। ফলে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি-কাকরভিটা স্থলবন্দর। কিন্তু স্থলবন্দরটির অবকাঠামোগত অবস্থা বর্তমানে খুবই নাজুক, নেই কোন পণ্যবাহী যানবাহনের পার্কিং ও ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। তাই তিনি বাংলাদেশ ও নেপালের মাঝে ভারতের করিডোর ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা নিরসন ও স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে ট্রানজিট কার্গো পরিবহনের পদ্ধতি নির্ধারণ, বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী-কাকরভিটা-পানিট্যাংকি বাণিজ্যপথ ৪ লেনে উন্নীতকরণ, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপন, সৈয়দপুর-বিরাটনগর রুটে বিমান চলাচল চালু করণের ব্যবস্থা করাসহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের নেপালের ভিসা পদ্ধতি আরও সহজ করার পাশাপাশি রংপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে রংপুরে নেপালের ভিসা প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ডক্টর চপ লাল ভূষাল বলেন, দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে  বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে। তিনি আশা করেন ভৌগলিক সুবিধা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের কারণে নেপাল-বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি  বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি-কাকরভিটা স্থলবন্দরের বিভিন্ন জটিলতা নিরসনসহ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে   দু'দেশের নীতি-নির্ধারণী মহলে আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ^াস প্রদান করেন। এছাড়া তিনি স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দু’ দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিবিআইএন পুরোপুরি কার্যকর হলে ইউরোপিয় ইউনিয়নের আদলে বিবিআইএনভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং উভয় দেশগুলো এ সুবিধার সুফল ভোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে  ব্যবসায়ীদের বিরাজমান সমস্যাসমূহ নিরসনে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাবনাসমূহ যথাযথ সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবেন বলে উপস্থিত চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।  
মত বিনিময় সভায় রংপুর চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আমদানি ও রপ্তানিকারকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।