দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করতে ভারতীয় হাই কমিশনারের সাথে রংপুর চেম্বার পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মত বিনিময় সভা

২৮ নভেম্বর ২০১৯, রংপুর চেম্বার বোর্ড রুমে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যসায়ীদের এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 
মতবিনিময় সভায় বক্তরা দুই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ অশুল্ক বাধাসমূহ দূর করা এবং পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সড়ক, আকাশ ও রেলপথের যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেন। চেম্বার নেতারা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অশুল্ক বাধা দূরীকরণ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখা স্থাপন, খাদ্য পণ্যের টেস্টিং প্রক্রিয়ায় বিলম্বতা নিরসনসহ ভারতীয় কাস্টমস কার্যালয় সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যাপারে মতামমত ব্যক্ত করেন। বক্তারা রংপুর বিভাগের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তেরর দাবি জানান। রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে মত বিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীস্থ ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটী।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের মধ্যে থেকে বক্তব্য রাখেন রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন, রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিসিআই এর সাবেক সভাপতি মোতাহার গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ¦ মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বিশিষ্ট আমদানি ও রপ্তানিকারক আলহাজ¦ ময়েন উদ্দিন ও জনাব গোলাম রব্বানী জুলফি।
বক্তারা অপর্যাপ্ত বন্দর সুবিধা, অশুল্ক বাধা, দুর্বল অবকাঠামো ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জটিলতা, ভারতের শুল্ক বিভাগে এইচএস কোড জটিলতা, বাংলাদেশি পণ্যের নমুনা ভারতীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সময় ক্ষেপন, ন্যূনতম রফতানি মূল্য নির্ধারণ, পাট ও পাটজাত পণ্যে এন্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করাসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে বাংলাদেশী পন্যের রপ্তানি চাহিদা থাকলেও রপ্তানিকারকরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভারতে পণ্য রফতানি করতে পারছে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তাই তারা উক্ত সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসনের  পাশাপাশি রংপুর বিভাগের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তির করতে ভারতীয় হাই কমিশনারের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মতবিনিময় সভায় ভারতের হাই কমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমে বাড়ছে। ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর সৌহার্দ্যরে ভিত্তিতে ভারত সরকারের ১৯৩ মিলিয়ন ডলার সহায়তায় আগামী চার বছরে বাংলাদেশে ১২টি হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ শেষ হবে। যেখানে ভারত এবং বাংলাদেশের সমন্বয়ে ৩০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ আইটি জনশক্তি হিসেবে তৈরি করা হবে। তিনি বাংলাদেশী পণ্যের ভারতে রপ্তানি বাড়াতে  বিটুবি মিটিং ও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি আজকের মত বিনিময় সভায় দ্বিপাক্ষিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে  ব্যবসায়ীদের বিরাজমান সমস্যাসমূহ নিরসনে পর্যায়ক্রমে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা হবে মর্মে উপস্থিত চেম্বার ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।  
সভাপতির বক্তব্যে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ও তাদের অবদানের কথা সারা জীবন কৃতজ্ঞচিত্তে মনে রাখবে বাংলাদেশের জনগণ। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। তাই তিনি ভারত থেকে আমদানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার লক্ষ্যে রফতানি বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান অশুল্ক বাধাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করার ক্ষেত্রে ভারতীয় হাই কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সরকারের কর অবকাশসহ বিভিন্ন প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণ করে ভারতের শিল্পপতিদেরকে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগে ইকনোমিক জোন স্থাপন করে যৌথ বা এককভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। 
মত বিনিময় সভায় রংপুর চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা এবং পরিচালকবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ এবং রংপুরের আমদানি-রপ্তানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন। মত বিনিময় সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।