রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা-২০১৬ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মত বিনিময় সভা
 ২৯ অক্টোবর ২০১৯, রংপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র আয়োজনে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা-২০১৬ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের উদ্ভূত সমস্যা নিরসন সংক্রান্ত মত বিনিময় সভা রংপুর চেম্বারের আরসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাস্টম্স, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের কমিশনার শওকত আলী সাদী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাস্টম্স, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আব্দুল মান্নান সরদার ও রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন।
সভায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্য  থেকে বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন,  কর, শুল্ক ও ভ্যাট এবং বিএসটিআই উপ-পরিষদের আহ্বায়ক ও রংপুর চেম্বারের পরিচালক মোঃ রিয়াজ শহিদ শোভন, নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর চেম্বারের পরিচালক মোঃ আকবর আলী, কামাল কাছনা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মকসুদার রহমান মুকুল, দেওয়ানবাড়ী রোড ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর চেম্বারের পরিচালক মোঃ জুলফিকার আজিজ খান ভুট্টু, রংপুর জেলা ময়দা মিল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ ময়েন উদ্দিন, রংপুর জেলা বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মজিবর রহমান, কসমেটিক্স ব্যবসায়ী তারিকুল ইসলাম, মাহিগঞ্জের ব্যবসায়ী মোঃ আজিজুল্ল্যাহ, রংপুর চেম্বারের পরিচালক প্রণয় বণিক, স্বাদ কনফেশনারীর দুলাল হোসেন,  জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফিরোজ হায়দার।
মত বিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেন, কৃষিভিত্তিক রংপুর অঞ্চল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এখনো অনগ্রসর। গ্যাসের অভাব, বিদ্যুতের স্বল্পতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারনে এ অঞ্চলে আজ পর্যন্ত বৃহৎ কোন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। যার ফলে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের মাথাপিছু আয় ও জীবনমানও বাড়েনি। কেননা ব্যবসায়ীরা সরকারের ঊর্ধ্বে নয়, ব্যবসায়ীরা সাধ্যমত ভ্যাট প্রদানে আগ্রহী । ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিতে ইচ্ছুক তবে ভ্যাট বা ট্যাক্স যাতে ব্যবসায়ীদের সহনীয় হারে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে এবং অহেতুক হয়রানীর শিকার হতে না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের কমিশনার শওকত আলী সাদী বলেন, সৎ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিচ্ছে আর অসৎ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে। তাই আগামী মাস থেকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের পক্ষ থেকে অনিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনতে রংপুর বিভাগে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা  করা হবে ।  এছাড়া তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীরা অনলাইনের মাধ্যমে জটিলতা ও হয়রানি মুক্ত পরিবেশে নিজের ভ্যাট নিজেই প্রদান করছে। এতে ব্যবসায়ীরা অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছে। এছাড়া ভ্যাটের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও তৃণমূল পর্যন্ত ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে  সম্প্রসারিত হবে। তিনি ভ্যাট অনলাইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে  জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সভা, সেমিনারের মাধ্যমে ভ্যাটদাতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন মর্মে উপস্থিত ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বাস প্রদান করেন। 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুরের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আব্দুল মান্নান সরদার বলেন, ভ্যাট হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। বর্তমান ভ্যাট আইনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানকে আগের তুলনায় আরো বেশি সুবিধা দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এই সুবিধা দেওয়ার পেছনে একটি যুক্তি হচ্ছে যে অনেক প্রতিষ্ঠান হয়রানিমুক্ত পরিবেশে ভ্যাট দিতে চায়। তাই ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে যথাযথভাবে ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, শুধু নতুন ভ্যাট ব্যবস্থা চালু করলেই হবে না, সেটি জনবান্ধব হতে হবে। ভ্যাট কর্মকর্তাদেরকে রাজস্ব সংগ্রহে কার্যকর নতুনত্ব আনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে সেবার মানসিকতাও। একই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি যেন সহজ ও জনবান্ধব হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগকে। তিনি বলেন, দেশের উন্নত ও অনুন্নত অঞ্চলে একই হারে ভ্যাট হার নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত নহে। কেননা রংপুর বিভাগে গ্যাস নেই, অবকাঠামোগত সুবিধা নেই, বৃহৎ কোন শিল্প কলকারখানা নেই। তাই রংপুরে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোসহ সহনীয় ও বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে রংপুরের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সহনীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ের আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি অনলাইনে ভ্যাট আদায় হলে অসাধু ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তারাও অনৈতিক সুবিধা থেকে নিরুৎসাহিত হবে মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আরো ত্বরান্বিত হবে। পরিশেষে তিনি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যবসায়ীদেরকে ভ্যাট প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও পরিচালকবৃন্দ, রংপুর জেলার ৮ উপজেলার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ, রংপুর শহরের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।