রংপুর চেম্বারে নেপলী ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে মত বিনিময় সভা
২৬ জানুয়ারি ২০১৯, সকালে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র আয়োজনে নেপালের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে রংপুরের আমদানি-রপ্তানিকারকদের দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে এক মত বিনিময় সভা রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ১৫ জনের নেপালী ব্যবসায়ী প্রনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশস্থ নেপাল দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর ধান বাহাদুর অলি। মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু।
নেপালের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজতোবা হোসেন রিপন, বিশিষ্ট আমদানিকারক আলহাজ¦ মগরব আলী, শাহ মোঃ এনামুর রহমান প্রধান, আলহাজ¦ ময়েন উদ্দিন, মোঃ হুমায়ুন কবির সওদাগর, মোঃ সারওয়ার জাহান মানিক, রংপুর চেম্বারের পরিচালক ও রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আশরাফুল আলম আল আমিন, বাংলাদেশস্থ নেপালী দুতাবাসের থার্ট সেক্রেটারি অনিল লওশাল, নেপাল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র নির্বাহী সদস্য প্রেমবা শেরপা, হারবাল এন্টারপ্রিনিয়ার এসোসিয়েশন অব নেপাল এর সদস্য গোবিন্দ ঘিমাইর, বায়ো হারবাল প্রোডাক্টস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেমরাজ তেওয়ারি, প্রসিদ্ধি হ্যান্ডিক্রাফটস ইন্ডাষ্ট্রি’র স্বত্বাধিকারী সৃজনা রানা মেঘার, হিমালিয়ান নেচারালস প্রাইভেট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশীল গাওয়ালী, ডিজেম্বালা হারবাল প্রাইভেট লিমিটেড এর ধান বাহাদুর লামা, মহিলা উদ্যোক্তা ফেডারেশনের সভাপতি দেবিকা বুডাথুকি।
বক্তারা বলেন বাংলাদেশ-নেপালের সঙ্গে ভারতের ৫৪ কিলোমিটার সড়কপথ দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বৈপ্লিক পরিবর্তন আসবে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি নেপালের গম,আদা, মসলা,ডাল ও অন্যান্য ভেষজ পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে বাংলাদেশে। স্থলপথে উভয় দেশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা গেলে বাংলাদেশ থেকে অনেক পর্যটক যাবে হিমালয় কন্যা হিসেবে খ্যাত নেপালে। কিন্তু করিডোর সমস্যা থাকার কারণেই দু’দেশের এই বিপুল সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে না বলে বক্তারা মতামত ব্যক্ত করেন। 
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বারের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, নেপাল আমাদের পাশর্^বর্তী বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্য বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা বহুমাত্রিক; যেমন নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে নেপালে উৎপাদিত পণ্যের বাংলাদেশে আমদানির সম্ভাবনা আছে। নেপাল স্থলবেষ্টিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রেল ও সড়ক পথে ট্রানজিটের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নেপালের উৎসাহ রয়েছে। তাই তিনি দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে ট্রানজিটের মাধ্যমে কার্গো পরিবহনের পদ্ধতি নির্ধারণ, উভয় দেশের পণ্য আমদানিতে পারস্পারিক শুল্ক সুবিধা দেওয়া, কাকরভিটা-পানি ট্যাংকি-ফুলবাড়ি বাণিজ্যপথ পুরোপুরি চালু, রেল যোগাযোগ স্থাপনে রোহনপুর-সিংবাদ রেলপথ ব্যাবহার করে নেপালে পণ্য পরিবহন, টেকনিক্যাল ব্যারিয়ার টু ট্রেড (টিবিটি) দূর করার লক্ষ্যে সেনেটারি ও ফাইটো সেনেটারি (এসপিএস) ব্যবস্থা সমন্বিতকরণ, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নেপালে বিজনেস ভিসা সহজ করা এবং নেপালি নাগরিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে অনএরাইভেল ভিসা চালু, এক দেশ অন্য দেশের বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ, দু’দেশের পর্যটন শিল্প বৃদ্ধি, ফার্মাসিটউক্যাল পণ্যের নিবন্ধন সহজ করা ও বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি) এবং পাবলিক ট্রেডিং করপোরেশন অব নেপালের (পিটিসিএন) মধ্যে সরকারি পর্যায়ে জরুরি পণ্য সরাসরি ক্রয় বিক্রয়ে উভয় দেশের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।  পরিশেষে তিনি বাংলাদেশ ও নেপালের মাঝে ভারতের করিডোর ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা নিরসন ও স্থল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ এবং সৈয়দপুর-বিরাটনগর রুটে দ্রুত বিমান চলাচল চালু করণসহ রংপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে রংপুরে নেপালের ভিসা প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশস্থ নেপাল দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সিলর ধান বাহাদুর অলি বলেন, বাংলাদেশ নেপালের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। নেপাল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। গম,আদা, মসলা,ডালসহ অন্যান্য ভেষজ পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে বাংলাদেশে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল, রাসায়নিক উপাদান, তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং খাদ্য ও পানীয়সহ নেপালে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে উভয় দেশের পাস্পারিক চাহিদাগুলো পুরণ করার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি আশা করেন ভৌগলিক সুবিধা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশের কারণে নেপাল-বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বিবিআইএন পুরোপুরি কার্যকর হলে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের আদলে বিবিআইএনভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং উভয় দেশগুলো এ সুবিধার সুফল ভোগ করবে। তিনি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিরাজমান সমস্যাসমূহ নিরসনে রংপুর চেম্বারের প্রস্তাাবনাসমূহ সরকারের নীতি-নির্ধারণে মহলে তুলে ধরবেন বলে উপস্থিত চেম্বার নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করেন।  
মত বিনিময় সভায় রংপুর চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, নেপালের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, রংপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আমদানি ও রপ্তানিকারকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।